1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

বাংলাদেশ আর এর শিল্প – সাহিত্য – সাংস্কৃতি

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১০ জুন, ২০২১
  • ৩০৫ Time View

লেখক মামুনুর রশীদ,লন্ডন থেকে

আসাদুজ্জামান নুর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, আগেও কয়েকবার দেখেছি কাছ থেকেই কিন্তু তখন সেলফি কাল ছিলোনা বলে আগ্রহ বোধ করি নি কিন্তু এখন তো চাইলেই সে সুবিধা আছে, তাই একটা সেলফি উনার সাথে নেয়াই যায়! আর এই দাওয়াত ওয়ালা বড়িতে নিশ্চয়ই উনি সেটা নিষেধ ও করবেন না।

যেই ভাবা সেই কাজ, বিনীত ভাবে কাছে গিয়ে বলতেই উনি রাজী হলেন এবং ২ জনেই খুব স্মিতহাস্য নিয়ে ছবির পোজ দিচ্ছি কিন্তু বিধিবাম সেই সেলফি আর তুলতে পারছিনা ফোনের কোন সমস্যার কারণে, সবাই উনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে তাই উনাকে আটকেও রাখা যাবেনা বেশীক্ষণ। আমি খুবই চেস্টা করছি যাকে বলে একদম প্রাণপণ চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু কোন ভাবেই একটা সেলফি নিতে পারছিনা। একসময় উনি বিরক্ত হতে শুরু করলেন। একসময় আমি নিজেই বিরক্ত হয়ে উনাকে বললাম, আপনি বিশ্রাম করুন।
উনি খুব অসহায়ের মতো একটা একটা চেয়ারে বসে বিড়বিড় করতে লাগলেন, ততক্ষণে মোবাইল রিস্টার্ট দিয়ে ছবি তোলার জন্য তৈরী হলেও আমার নিজের আর তখন ছবি তোলার ইচ্ছাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। তাই আর ছবিটা তোলা হয়নি- ঠিক এর পরেই আমার ঘুম ভেঙে যায়!

স্বপ্নে দেখা নুর সাহেবের এমন অসহায় ছবি আমার মনটাই খারাপ করে দেয়। এমন অসহায় নুর সাহেবের ছবি আমি রাখতে চাই নি; নুর সাহেব আমাদের কাছে হলুদ পাঞ্জাবী তে শহরময় ঘুরে বেড়ানো হিমু, নুর সাহেব আমাদের কাছে আয়োময়ের দাপুটে ছোট মির্জা; নুর সাহেব আমাদের কাছে হাওয়া মে উড়তা যায়ে – বাকের ভাই….

এই নুর সাহেব আমাকে টানেনা, না বয়সের ভারে নত হওয়ার জন্য না – সেতো আজ হোক কাল হোক সবাইকেই নত হতেই হবে; এই নুর সাহেবের অসহায়ত্বের জন্যই আমি তার প্রতি কোন আকর্ষণ বোধ করি না।

নুর সাহেবের এই অসহায় মুখ আমার কাছে আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সাংস্কৃতির একদম যোগ্য প্রতিচ্ছবি মনে হয়। এই তো সেদিন ও বাংলাদেশের সিনেমা হলে দাপটের সাথে চলেছে রাজ্জাক, আলমগীর, জাফর ইকবাল, আনোয়ার হোসেন, সালমান শাহ, শাবানা, মৌসুমী, কবরী, রওশন জামিল দের ছবি। ভাঙা – ছারপোকা ওয়ালা চেয়ার , প্রায় মহাশূন্যের কাছাকাছি লাগানো ফ্যান, এমনকি শুধু কাঠের বেঞ্চে বসেও “হাউজফুল” শো চলতো মধ্যরাত অবদি। সারারাত জেগে ভি সি আর সেট ভাড়া করে এনে বাংলা সিনেমা দেখা হতো পরিবারের সবাই মিলে, শুক্রবারে কিংবা ভোটের রাতে বাংলা ছায়াছবি দেখার জন্য উৎকন্ঠ থাকতো লোকজন।
মাসান্তে শুধু ছায়াছবির ১০ টি গানের অনুসঠান ছায়াছন্দ দেখার জন্য টিভি সেটের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়তাম সবাই। সারা বিশ্বের দরবারে না হলেও অন্তত এশিয়াতে, নিদেনপক্ষে সার্ক এ আমাদের চলচ্চিত্রের, চলচ্চিত্রের শিল্পীদের একটি আলাদা সম্মানজনক স্থান ছিলো।

অথচ মাত্রে ৩ দশকের ব্যবধানে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প মোটামুটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, সিনেমা হল কমতে কমতে শূন্যের কোঠায়, ২/১ টা আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা হল এখন হলেও তাদের চালানোর মতো নিজেদের ছবি ই আর হয় না এখন! যাও বা হঠাৎ ২/১ টা ভিন্ন ধারার ছবি হয় তাও নানা কারণে শেষ অবদি আলোর মুখ দেখে না!

এদেশের চলচ্চিত্র চলে যায় অদ্ভুত সব নামের, কিম্ভুত সব অভিনেতা – পরিচালক – প্রযোজক আর কলাকুশলীদের দখলে। আমরা বাংলা চলচ্চিত্রের কথা মনে করি কেবল একরাশ হতাশা ঝাড়তে আর ট্রল করতে!!

ঠিক একই অবস্থা হয়েছে, না বরং এরচেয়েও খারাপ অবস্থা হয়েছে আমাদের ছোট পর্দার! এক বিটিভি আমাদের আমাদের যেভাবে আটকে রাখতে পেরেছিলো, আজ মুড়ি মুড়কির মতো ২০ / ৩০ চ্যানেল গজিয়েও সেটা পারছেনা।

বাজী ধরে বলতে পারবো, গত ১০ বছরে সেইসব দিনরাত্রি, সংসপ্তক, অয়োময় এর মতো ৩ নাটকের নাম ও বলতে পারবেন না; ইনফ্যাক্ট শেষ কোন নাটক খুব উপভোগ করেছিলেন সেটাই হয়তো মনে নেই! অথচ একসময় পশ্চিমবাংলার লোকজন পর্যন্ত উৎসুক হয়ে থাকতো আমাদের নাটক দেখতে! ১৫ বছর আগেও বিদেশ বাড়িতে আমরা সপ্তাহান্তে অপেক্ষা করত কোন নাটক ডাউনলোড করে দেখার জন্য।

অথচ টিভির এক সময়ের জাদরেল সব শিল্পী রা এখন চলে গিয়েছেন চোখের আড়ালে, বেশীরভাগই চলে গিয়েছেন দেশ ছেড়ে – বেছে নিয়েছেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের জীবন! আর আমাদের টিভি গুলো চলছে বিজ্ঞাপনে, ফালতু সব কাতুকুতু টাইপ অনুসঠানে আর বস্তাপচা “কলতলার ঝগড়া” র যত্তসব ফালতু টক শো নিয়ে।

ঠিক একই অবস্থা দেশের সঙ্গীতাঙনে, কি একক – কি ব্যান্ড! গত ৮/১০ বছরের ও বেশী সময়ে ১০ টি দুর্দান্ত শিল্পী আমাদের বের হয়নি যারা, এন্ড্রু কিশোর, সুবীর নন্দী, সৈয়দ আবদুল হাদী কিংবা আইয়ুব বাচ্চু, মাকসুদ, সাবিনা ইয়াসমিন, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, কুমার বিশ্বজিৎ দের কাছাকাছি না হলেও সেই ঝান্ডাটা এগিয়ে নিবেন। অথচ কতভাবেই না প্রতিভার খোঁজ হচ্ছে কিন্তু এরপরেই যেন সবাই হারিয়ে যায়।

কত বছর মনে দাগ কেটে থাকার মতো কথা আর সুর নিয়ে ৮/১০ গান শুনিনা; ঘুরে ফিরে সেই অতীতের গান গুলোই অথবা তাদের সব রিমিক্স আর রিমেক গুলোই দেখি, শুনি। এর ফাঁকেই জায়গা করে নেয় সব “উঠতি তেল খাওয়া সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ” রা!

আমরা আর কোন হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ুন আহমেদ, আহমেদ ছফা,শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ, লুৎফর রহমান রিটন, রুদ্রের মশাল টা ধরার জন্য ও খুব বেশী হাত পাইনি! খুব যৎসামান্য লেখক কবি চেস্টা করে যাচ্ছেন আলোটা জ্বালিয়ে রাখার। অথচ একসময় বাংলা সাহিত্য বিশ্বের অনেক বড় বড় সাহিত্যের সাথে বাংলা সাহিত্যের স্থান করে নিয়েছিলো অনেক উচ্চতায়।

আগের প্রজন্মের সব গুণী মানুষেরা একে একে চলে যাচ্ছেন পর্দার অন্তরালে অথবা জীবনের অন্তরালে, পিছনে পড়ে থাকছে বিশাল বিশাল শুণ্যতা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে। এই সব শুণ্যতা আগামী ২/১ দশকে দূর হবে না তা নিশ্চিত বলা যায়। এর মূল কারণ হচ্ছে অবনমিত শিক্ষার মান।

শিক্ষা মানুষের রুচি তৈরী করে আর অশিক্ষা তৈরী করে সস্তা জনপ্রিয়তা। এখন আমরা সবাই জনপ্রিয়তার কাঙাল, কাজের মানের চেয়ে কাজের সংখ্যা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

এই যে এত শুণ্যতা তৈরী হচ্ছে সে সব পূর্ন করা তো দুরের কথা, সেসব শূন্যতা কেন হচ্ছে, সমাজে এর সম্ভাব্য ফলাফল কি, কিভাবে এই শূন্যতা কমানো যেতে পারে তা নিয়ে সুস্থভাবে আলোচনা করার, তর্ক – বিতর্ক করার মতো অবস্থা ও আমাদের এখন আর নেই।

এর কারণ কি জানেন?

এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের রেখাচিত্রের নিম্নমুখীতা!
এর ফলস্বরূপ আমাদের চলচ্চিত্রের পোস্টার বয় হয়ে উঠছেন আলম সাহেব, জলিল সাহেবের মতো অভিনেতারা; বাতাবী লেবু আর বাচাল টক শো ওয়ালারা রিপ্রেজেন্ট করছে টিভি মিডিয়া কে; মাহফুজ দম্পতি হয়ে উঠেছেন আমাদের সঙ্গীত অঙ্গনের সাইনবোর্ড আর এদের ফাঁকফোকরে টিকটকার হৃদয় বাবু, কলিজা হাবু, গিলা রাজা, গুর্দা জব্বার, সেফায়েত উল্লাহ তো আছেন আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে।

দেশের শিল্প, শিক্ষা, সাংস্কৃতির সবচেয়ে উজ্জ্বল সময়ের অনেক গুণী মানুষ এখনো আমাদের মাঝে আছেন, তারপর ও আমাদের এগুলো দেখতে হচ্ছে, শুনতে হচ্ছে, মেনে নিতে হচ্ছে অথচ একবার শুধু ভাবুন আগামী ২০ বছরের মধ্যে যখন এই গুণী মানুষদের একটি বড় অংশ আমাদের মাঝে থাকবেন না, তখন আমাদের অবস্থা কি হবে?

একটি দেশে শিক্ষা, শিল্প – সাংস্কৃতির কোন পুনঃ জাগরণ নেই, কোন উন্নতি নেই, সেইসব দেশ বা জাতিগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ কেমন হয় তার উদাহরণ তো এখন আমাদের সামনেই ভুড়ি ভুড়ি রয়েছে, তারপরো কেন আমাদের বুঝতে এত দেরী হচ্ছে? শুধু ইট পাথরের কাঠামোতেই কেন আমাদের উন্নয়ন থেমে যাচ্ছে?

একটি জাতির মাত্র ৫০ বছর বয়সেই এসব প্রশ্ন উঠাটাই কি একধরনের ভয়ংকর বার্তা না?
এসবের উত্তর খোঁজার সময় কিন্তু খুবই দ্রুতই চলে যাচ্ছে! অতি সত্তর এসবের সঠিক উত্তর বের করতে না পারলে এখন যতই আরাম আয়েশে থাকুন না কেন খুব শীঘ্রই বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছেন এটা স্মরণ রাখবেন।

সময় গেলে কিছুতেই আর সাধন হবে না…

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..